সেজকাকিমা ব্রেস্ট-ক্যান্সারে মারা যাবার পর সেজকাকার আমাদের বাড়িতে যাতায়াতটা বেড়ে গেল। এই স্বজনহীন, বস্তুবহুল একাকিত্বের বিষণ্ণতা ভরা শহরে, কাকার, আমরা ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন আত্মীয় ছিল না। কাকার একমাত্র ছেলে, শিবপুর থেকে পাশ করা, বাপাইদা, চাকরি, সংসার সামলে, খড়গপুর থেকে আসার সময় পেত না। হাওড়ার রামরাজাতলাতে কাকার বাড়ি যেদিন যেতাম, সেদিন কাকার অকারন ব্যাস্ততা আর চকচকে চোখ দেখে আমার মনে হত যে পরের বার আর এত দেরি করব না, তাড়াতাড়ি আসব।
কর্কট রোগ কাকার পিছু ছাড়ল না। মুখের ভিতরে, ঘা ছড়িয়ে পরল। ক্রমশ জল টুকু গিলতে কষ্ট হত কাকার। শুনলাম যে বাপাইদার কাজের চাপ বেড়েছে, আসতে পারছে না। পরিসমাপ্তির খবর পেয়ে ছুটলাম। পাড়াপ্রতিবেশি একদুজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে ঘরে। কাকা ঘুমিয়ে আছেন পরমশান্তিতে। বাপাইদা সপরিবারে ঢুকল একটু পরেই। তোষকের তলার নির্দিষ্ট জায়গা থেকে আলমারির চাবি বের করে আগে লকার খুলল। কয়েকটি গার্ডার-বাঁধা, চিরকুট-লাগানো নোটের বাণ্ডিল বেরোল। একটাতে লেখা ‘মাসকাবারি’, দ্বিতীয়টাতে ‘শেষযাত্রা’। সেই বাণ্ডিল খরচ করেই কাকার সৎকার হল।
লেখিকাঃ জয়ীতা সেন রায়
No comments:
Post a Comment